• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ছিরছে মানুষ

  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। ইট পাথরের এই নগরী ছেড়ে একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শিকড়ের টানে ছুটছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। ঈদযাত্র শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। কল কারখানা ছুটি হওয়ায় গতকাল যাত্রীচাপ ছিল বেশি। চিরচেনা রূপে ফিরেছে সদরঘাট। পরিবহন সংকটে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখে গেছে। সেই সাথে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা- টাঙ্গাইল সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে।

গতকাল শিল্পকারখানা অধ্যুষিত গাজীপুরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ছুটি দিয়েছে। ফলে গাজীপুরের ঢাকা টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহনের সংকটও ছিল। যানবাহনের ওঠার পরেও যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। যাত্রীদের জিম্মি করে ৩০০ টাকার বাস ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে বাসভাড়া ৩০০ টাকা, সেখানে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। পুলিশ সদস্যরাও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিন দুপুরে ছুটি পেয়ে গাজীপুর থেকে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক ঈদযাত্রায় শামিল হয়েছেন। এত এত যাত্রীর তুলনায় পরিবহনের সংখ্যা খুবই কম। পরিবহন সংকটে পড়ে বাস, ট্রাক, পিকআপ ও ড্রাম্প ট্রাকে করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন অনেকে। সরেজমিন দেখা যায়, যাত্রীর তুলনায় পরিবহন নেই বললেই চলে। ফলে চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে খাড়াজোড়া প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই রয়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ। তবে বাড়তি ভাড়া ছাড়া তেমন কোনো ভোগান্তির অভিযোগ নেই। ঈদযাত্রায় অন্যতম মাধ্যম ট্রেন। তাই কমলাপুর রেলস্টেশনে দিন-রাত ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ঈদযাত্রায় চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের ব্যাপক সংকট থাকলেও যারা সোনার-হরিণ টিকিট মেলাতে পেরেছেন তাদের যাত্রায় নেই কোনো বিড়ম্বনা। ঢাকার কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা। আগে ঈদযাত্রা নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে বলেও জানান তারা।

গত ৩ এপ্রিল শুরু হয় ট্রেনে ঈদযাত্রা। শুরুর প্রথম তিনদিন যাত্রীচাপ ছিল একেবারেই কম। ৬ এপ্রিল থেকে কিছুটা বাড়তে থাকে। এবার লম্বা ছুটি থাকায় ভাগে ভাগে যাচ্ছেন যাত্রীরা। তাই ঈদযাত্রায় কমলাপুর স্টেশনের চিরচেনা সেই রূপ দেখা যাচ্ছে না এখনো।

যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়াকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার। এদিকে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে রেবের কার্যক্রম তুলে ধরতে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন র‌্যাব পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তেমন দুর্ভোগ ছাড়াই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। ঈদযাত্রায় কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন র‌্যাব পরিচালক খন্দকার আল মঈন। পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ উদযাপনে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন গড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

তিনি জানান, কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে র‌্যাব। ঈদে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায়ও রেব কাজ করছে বলেও

জানান খন্দকার আল মঈন

সদরঘাটে সেই চিরচেনা ভিড় : গত দুই বছরের ঈদের তুলনায় এবার ঢাকার সদরঘাটে বাড়ি ফেরার চিত্র একটু ভিন্ন। কেননা পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে বরিশাল অঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমায় সদরঘাটের চেনা রূপ অনেকটাই হারিয়েছিল। তবে ঈদের ছুটির সঙ্গে ফিরেছে চেনা সেই ভিড়। গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এ চিত্র দেখা যায়। বরিশাল, ভোলা ও চাঁদপুর যাওয়া জন্য ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিলাস-বহুল লঞ্চ। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী উঠানোর হাঁকডাক দিচ্ছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। ঈদযাত্রা শুরুর পর থেকে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক অনেক বেশি।

সদরঘাটে লঞ্চ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর প্রভাব না থাকায় চাঁদপুর রুটে শিডিউল অনুযায়ী চলছে লঞ্চ। ভোলা অঞ্চলের লঞ্চগুলোতে দুপুর থেকে ভিড় করেছে যাত্রীরা। সকাল থেকে ভোলার বিভিন্ন রুটে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাকি লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে।

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদযাত্রার শুরুর পর থেকে এত ভিড় হয়নি। ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের ভিড় বেড়েছে। আগামী দুদিন যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার যাত্রী বেশি লঞ্চে।

ঢাকা-বরিশাল রুটে এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফ আমিরুল ইসলাম জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমাদের যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। যাহোক ঈদ উপলক্ষে যাত্রী বেশ বেড়েছে। বেশিরভাগ কেবিনগুলো থেকেই বুকিং দেওয়ায় কোনো কেবিনই খালি যাচ্ছে না। তবে ডেকে গাদাগাদি অবস্থাটা নেই।

যাত্রীর চাপ বাড়ায় লঞ্চ কেবিনগুলোর ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান যাত্রীরা। তবে বরিশালগামী লঞ্চগুলোর ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও ভোলাগামী লঞ্চগুলোর ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী।

এদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসন বলেন, এবার ঈদে নৌপথে যাবে আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হবে। তবে ঘরমুখী মানুষের স্রোত কার্যত শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। ওইদিন থেকে ঈদ স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। ঈদের আগের দুদিনসহ সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়ছে। এই হিসেবে প্রতিদিন ৩ লাখের বেশি যাত্রী সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে গন্তব্যে যাবে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, নৌযানের কোনো স্বল্পতা নেই, সোমবার ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে গেছে সারা দিনে ৫৮টি, রাতে আরও বেশ কিছু লঞ্চ ছাড়বে। আমরা গড়ে প্রতিদিন ১০০টি লঞ্চ প্লাটুনে রেডি রাখছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads